ঈদের আমেজ কাটেনি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে : লাখো পর্যটকের ভীড়

কক্সবাজার জার্নাল প্রতিবেদক :

কোরবানি ঈদের আমেজ কাটেনি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও তা উপেক্ষা করেই উচ্ছ্বাসে মেতেছেন পর্যটকরা। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিয়োজিত রয়েছে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, ট্যুরিস্ট পুলিশ, আনসার ও লাইফ গার্ড কর্মীরা।
শনিবার রাত থেকেই পর্যটন শহর কক্সবাজারে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। রোববার দুপুর হতেই আকাশ অনেকটা রৌদ্রময়। সাগরে স্রোতের তীব্রতা সামান্য বেশি মনে হলেও খুব উত্তাল বলা যাবে না। এজন্যে পর্যটকদের মধ্যে তেমন উৎকন্ঠা নেই।

এখনো লাখো পর্যটকের ভীড়। সাগর আর পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগে মেতেছেন পর্যটকরা। বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করে ঈদের পরদিন থেকে সৈকতের সব পয়েন্টে পর্যটকদের উপচে পড়া ভীড়। সৈকত ছাড়াও জেলার বিনোদন স্পটগুলোতেও পর্যটকের কমতি নেই।

রোববার সকাল থেকে মেঘ-রোদরে লুকোচুরি খেলায় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সাগরের উচ্ছ্বাসে মেতেছেন পর্যটকরা। এর প্রভাব পড়েছে হোটেল-মোটেল গুলোতে।

হোটেল মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, শহরের প্রায় ৪০০ শত হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউজের কক্ষ খালি নেই। ঈদের ছুটি সাথে সরকারি ছুটি মিলে পর্যাপ্ত সময় হাতে থাকায় স্বজনদের নিয়ে সমুদ্র সৈকতসহ জেলার পর্যটন স্পট গুলোতে ভিড় জমিয়েছেন ভ্রমণ পিপাসুরা।

চট্টগ্রাম থেকে নববধুকে নিয়ে হানিমুনে এসেছেন মো. আলম, তিনি বলেন, বিয়ে করে বউকে নিয়ে হানিমুনে এলাম কক্সবাজারে। বউকে যখন জিজ্ঞেস করি হানিমুনে কোথায় যাবে? কক্সবাজার থাকতে আর কোথায়! কক্সবাজার কেন এত ভাল লাগে জানতে চাইলে বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। একদিকে সাগর অপরদিকে পাহাড়। এই যেন সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতে সাজিয়েছেন৷ সমুদ্র স্নান এবং সি-ফুড বেশী ভাল লাগে।

অপরদিকে, বেড়াতে আসা পর্যটকদের সেবা দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। আর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সার্বক্ষণিক কাজ করছে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, টুরিস্ট ও জেলা পুলিশ, লাইফ গার্ড এবং জেলা প্রশাসন।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, টানা ছুটি মাথায় রেখে আগেই পর্যটকরা হোটেল-মোটেল বুকিং দিয়ে রেখেছিলেন। সকাল থেকেই পর্যটকরা ভিড় করেন সমুদ্র পাড়ে।

পর্যটকরা সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি দরিয়ানগর, হিমছড়ি ঝর্ণা, ইনানীর পাথুরে সৈকত, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, রামু বৌদ্ধ বিহার, মহেশখালী আদিনাথ মন্দিরসহ জেলার পর্যটন স্পটগুলোতেও ঢুঁ মারছেন।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির তথ্যানুযায়ী, কক্সবাজারের প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজে রয়েছে। যেখানে লক্ষাধিক পর্যটক অবস্থান করতে পারেন। কক্সবাজার বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি সূত্র জানায়, আগত পর্যটকদের সেবা নিশ্চিতে সর্তক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করছে ট্যুরিস্ট ও জেলা পুলিশ। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশও। পর্যটক হয়রানি রোধে পর্যটন স্পটগুলোকে সিসিটিভি ক্যামরার আওতায় আনা হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে দ্রুত সাধারণ চিকিৎসা ও খাবার পানির ব্যবস্থা রয়েছে সৈকতে। গোসল করাকালীন বিপদাপন্ন পর্যটকদের রক্ষার্থে সর্তক অবস্থায় রয়েছেন লাইফগার্ড কর্মীরা।

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মোঃ মামুন জানান, শুধু শীতকাল নয়, বৃষ্টির মাঝেও যে সৈকতকে এত মহনীয় লাগে তা ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার বেড়াতে না আসলে বুধতে পারতাম না। পরিবারসহ খুবই মজা করছি।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায়, পর্যটক হয়রানি বন্ধে হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় মূল্য তালিকা টাঙ্গানোর নির্দেশনা আগেই দেয়াছিল। সমুদ্র সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা, কলাতলীসহ ১১টি পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে তথ কেন্দ্র (ইনবক্স)। পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে একটি হটলাইন নাম্বারে (০১৭৩৩৩৭৩১২৭)। যে কোনো অভিযোগ এখানে করতে পারবে পর্যটকরা। হটলাইনের সেবা নিয়ে বেশ কয়েকজন পর্যটক হয়রানির বিচারও পেয়েছেন। জরিমানা করা হয়েছে কয়েকটি রেস্তোরা ও হোটেলকে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের বিশেষ রেসকিউ টিম, ইভটিজিং কট্রোল টিম, ড্রিংকিং জোন, দ্রুত চিকিৎসাসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে পর্যটকদের নিরাপত্তায়। সৈকতে বীচ বাইক নিয়ে টহল অব্যাহত রেখেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, পর্যটক হয়রানি বন্ধে মাঠে রয়েছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত।